পানির অপর নাম জীবন কথাটি আমরা
সকলেই জানি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের দিকে তাকালে দেখতে পাই
নানাভাবেই পানির ব্যবহার হচ্ছে কিন্তু পরিশোধন করার দিকে কারোই কোন মাথাব্যাথা নেই। যার
ফলে প্রতিনীয়ত খাল-বিল, নদী-নালার পানি দূষিত হয়। অনেক সময় খাবার পানি হিসেবেও এই
পানি ব্যবহৃত হয়, ফলে ডেকে আনছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ যার শেষ অসহ্য যন্ত্রণা বা
মৃত্যুতে। সুতরাং পানির অপর নাম জীবন না বলে বলা যায় বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন ও
দুষিত পানির অপর নাম মরণ।
শিল্প কারখানায় পানি বিভিন্ন
কাজে ব্যবহৃত হয় যা প্রকৃতি থেকে নেয়া হয় এবং ব্যবহারের পর আবার প্রকৃতিতেই ফেরত
যায়। এই পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনস্বিকার্য। আমার আজকের লিখাটি তাদেরই জন্য
যারা শিল্প কারখানার এই ব্যাপারগুলো ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকেন : -
১. প্রতিটি
শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলক কিছু উন্মুক্ত স্থান রাখতে হয়। এর ফলে অন্য সকল
চাহিদার সাথে সাথে ভবনের বাহিরে বৃষ্টির পানি পড়লে তা মাটি শুষে নেয় এবং রাস্তা,
ফুটপাত ইত্যাদি জায়গাগুলো জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পায়।
২. সুন্দর একটি ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনকে সুন্দর
রাখতে গেলে তার যত্ন নিতে হবে যেখানে পানির বিকল্প কিছু নেই। তাই প্রাকৃতিক
পানিগুলোকে ধরে রাখতে পারলে তা দিয়ে মাঠে, বাগানে ইত্যাদি জায়গাতে পানির অভাব পূরন করা সম্ভব।
৩. শিল্প কারখানার সাইটের আভ্যন্তরীন পানিগুলোতে
সরাসরি প্রকৃতিতে ছাড়া যাবে যদি সেটি বৃষ্টির পানি হয়। এর জন্য প্রয়োজন সারফেস
ড্রেনেজ। সেটি যেন অবশ্যই কোন এক্সপার্ট দিয়ে ডিজাইন করা হয় সেই ব্যবস্থাও নিতে
হবে।
৪. বিল্ডিং এর বাহিরের পানির ব্যবস্থাপনা যেমন
জরুরি, ভিতরের পানির ব্যবস্থাপনাও ঠিক তেমনই জরুরি। আমরা বিল্ডিং এর ভিতর টয়লেট, গোছলের
স্থান, হাতধোয়া বা অজু করার স্থান, কাপড় ধোয়া, কাপড় রং করা, বিভিন্ন রাসাতয়নিক
পদার্থের মিশ্রন ইত্যাদি অনেক কিছুতেই পানি ব্যবহার করে থাকি। প্রথমেই যা করতে হবে
সেটি হলো অতিরিক্ত পানির ব্যবহার কমানো।
৫. বিল্ডিং এর আভ্যন্তরিন ব্যবহৃত যে সমস্ত
পানিতে রং ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত হয় এবং তা প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয় সে
সকল পানি পরিশোধিত করেই ছাড়তে হবে আর এর জন্য প্রয়োজন ETP (Effluent Treatment Plant).
৬. যে
সমস্ত জায়গাতে Effluent ব্যবহৃত হচ্ছে না পানির সাথে, সেখানে ETP এর প্রয়োজন নেই। যেমন: টয়লেট, গোসল খানা, হাত ধোয়ার জায়গা, রান্নাঘর
ইত্যাদি। কিন্তু এই পানিগুলোকেও পরিশোধন করার প্রয়োজন আছে, আর এর জন্য STP ( Sewage Treatment Plant) ব্যবহার করা উচিত।
৭. পরিশোধিত
পানির গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য আরও একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা হলো WTP (Water
Treatment Plant). আমাদের দেশে এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত
হয়।
৮. পরিশেধিত পানিগুলোকে পুরোটা প্রকৃতিতে ছেড়ে
না দিয়ে বাগানে, মাঠে, গাছে, টয়লেট ফ্ল্যাশ এ ইত্যাদি স্থানে পুনরায় ব্যবহার করা
যায়। এতে পানির অপচয় অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে পুরোটাই ব্যবহার করার আইন হবে বলে মনেকরা হচ্ছে। যেটাকে আমরা Zero Discharge বলে থাকি।
৯. বিল্ডিং এর বিভিন্ন জায়গায় যেখানে পানির
ব্যবহার আছে সেখানে মিটার সেট করতে হবে এবং কি পরিমাণ পানি ব্যবহৃত হচ্ছে তার
হিসাব রাখতে হবে।
১০. নির্দিষ্ট মানের ফিক্সার টয়লেটে ব্যবহার করতে
হবে। যেমন- ডাবল ফ্ল্যাশ কমোড ব্যবহার, কম ফ্লো-রেট এর টেপ ইত্যাদি।
সংযোজনের আগেই এদের ব্যবহার ও গুণগত মান নিশ্চিত হয়ে তবেই সংযোজন করতে হবে এবং প্রস্তুৎকারকের কাছথেকে সার্টিফিকেট যোগার করতে হবে।
১১. কুলিং টাওয়ার থাকলে সেখানে কি পরিমান পানি
ব্যবহৃত হচ্ছে সেটার হিসাব করে মেক-আপ ওয়াটার ট্যাংক বানাতে হবে।
১২. প্রতিনিয়ত কি পরিমান পানি ব্যবহার হচ্ছে, কি
পরিমানের পানি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে এবং কি পরিমান পানি পরিশোধিত হয়ে পুনরায়
ব্যবহার করা হচ্ছে তার পরিমাপ রাখতে হবে।
১৩. পানির গুনগত মান ঠিক আছে (DO, PH, Color, etc) কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
১৪. খাবার পানি এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহারের পানি যেনো আলাধা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১৫. প্রতি ১০০ জন লোকের জন্যে ১টি করে খাবার পানির পয়েন্ট রাখতে হবে এবং এই পয়েন্ট যেনো টয়লেট থেকে ন্ূন্যতম ২০ফুট দুরে হয় কা নি:শ্চিৎ করতে হবে।
আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয়
জিনিসগুলোর মধ্যে পানি একটি অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। আমরা এর ব্যবহারে সতর্ক হবো,
মিতব্যয়ী হবো, দূষিত কম করবো এবং ব্যবহৃত পানিকে পরিশোধন করার ব্যবস্থা করবো এটাই হোক আমাদের সকলের লক্ষ্য।
স্থপতি মো: মাহামুদুর রহমান খান (পাপন)