Saturday, December 17, 2016

শিল্প কারখানার পানি ব্যবস্থাপনা


পানির অপর নাম জীবন কথাটি আমরা সকলেই জানি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের দিকে তাকালে দেখতে পাই নানাভাবেই পানির ব্যবহার হচ্ছে কিন্তু পরিশোধন করার দিকে কারোই কোন মাথাব্যাথা নেই। যার ফলে প্রতিনীয়ত খাল-বিল, নদী-নালার পানি দূষিত হয়। অনেক সময় খাবার পানি হিসেবেও এই পানি ব্যবহৃত হয়, ফলে ডেকে আনছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ যার শেষ অসহ্য যন্ত্রণা বা মৃত্যুতে। সুতরাং পানির অপর নাম জীবন না বলে বলা যায় বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন ও দুষিত পানির অপর নাম মরণ।
শিল্প কারখানায় পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় যা প্রকৃতি থেকে নেয়া হয় এবং ব্যবহারের পর আবার প্রকৃতিতেই ফেরত যায়। এই পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনস্বিকার্য। আমার আজকের লিখাটি তাদেরই জন্য যারা শিল্প কারখানার এই ব্যাপারগুলো ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকেন : -
১.    প্রতিটি শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলক কিছু উন্মুক্ত স্থান রাখতে হয়। এর ফলে অন্য সকল চাহিদার সাথে সাথে ভবনের বাহিরে বৃষ্টির পানি পড়লে তা মাটি শুষে নেয় এবং রাস্তা, ফুটপাত ইত্যাদি জায়গাগুলো জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পায়।
২.   সুন্দর একটি ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনকে সুন্দর রাখতে গেলে তার যত্ন নিতে হবে যেখানে পানির বিকল্প কিছু নেই। তাই প্রাকৃতিক পানিগুলোকে ধরে রাখতে পারলে তা দিয়ে মাঠে, বাগানে ইত্যাদি জায়গাতে পানির অভাব পূরন করা সম্ভব। 
৩.   শিল্প কারখানার সাইটের আভ্যন্তরীন পানিগুলোতে সরাসরি প্রকৃতিতে ছাড়া যাবে যদি সেটি বৃষ্টির পানি হয়। এর জন্য প্রয়োজন সারফেস ড্রেনেজ। সেটি যেন অবশ্যই কোন এক্সপার্ট দিয়ে ডিজাইন করা হয় সেই ব্যবস্থাও নিতে হবে।
৪.   বিল্ডিং এর বাহিরের পানির ব্যবস্থাপনা যেমন জরুরি, ভিতরের পানির ব্যবস্থাপনাও ঠিক তেমনই জরুরি। আমরা বিল্ডিং এর ভিতর টয়লেট, গোছলের স্থান, হাতধোয়া বা অজু করার স্থান, কাপড় ধোয়া, কাপড় রং করা, বিভিন্ন রাসাতয়নিক পদার্থের মিশ্রন ইত্যাদি অনেক কিছুতেই পানি ব্যবহার করে থাকি। প্রথমেই যা করতে হবে সেটি হলো অতিরিক্ত পানির ব্যবহার কমানো।
৫.    বিল্ডিং এর আভ্যন্তরিন ব্যবহৃত যে সমস্ত পানিতে রং ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত হয় এবং তা প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয় সে সকল পানি পরিশোধিত করেই ছাড়তে হবে আর এর জন্য প্রয়োজন ETP (Effluent Treatment Plant). 
৬.  যে সমস্ত জায়গাতে Effluent ব্যবহৃত হচ্ছে না পানির সাথে, সেখানে ETP এর প্রয়োজন নেই। যেমন: টয়লেট, গোসল খানা, হাত ধোয়ার জায়গা, রান্নাঘর ইত্যাদি। কিন্তু এই পানিগুলোকেও পরিশোধন করার প্রয়োজন আছে, আর এর জন্য STP ( Sewage Treatment Plant) ব্যবহার করা উচিত।
৭.   পরিশোধিত পানির গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য আরও একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা হলো WTP (Water Treatment Plant). আমাদের দেশে এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
৮.    পরিশেধিত পানিগুলোকে পুরোটা প্রকৃতিতে ছেড়ে না দিয়ে বাগানে, মাঠে, গাছে, টয়লেট ফ্ল্যাশ এ ইত্যাদি স্থানে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এতে পানির অপচয় অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে পুরোটাই ব্যবহার করার আইন হবে বলে মনেকরা হচ্ছে। যেটাকে আমরা Zero Discharge বলে থাকি। 
৯.    বিল্ডিং এর বিভিন্ন জায়গায় যেখানে পানির ব্যবহার আছে সেখানে মিটার সেট করতে হবে এবং কি পরিমাণ পানি ব্যবহৃত হচ্ছে তার হিসাব রাখতে হবে।
১০.  নির্দিষ্ট মানের ফিক্সার টয়লেটে ব্যবহার করতে হবে। যেমন- ডাবল ফ্ল্যাশ কমোড ব্যবহার, কম ফ্লো-রেট এর টেপ ইত্যাদি। সংযোজনের আগেই এদের ব্যবহার ও গুণগত মান নিশ্চিত হয়ে তবেই সংযোজন করতে হবে এবং প্রস্তুৎকারকের কাছথেকে সার্টিফিকেট যোগার করতে হবে।
১১.   কুলিং টাওয়ার থাকলে সেখানে কি পরিমান পানি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটার হিসাব করে মেক-আপ ওয়াটার ট্যাংক বানাতে হবে।
১২.   প্রতিনিয়ত কি পরিমান পানি ব্যবহার হচ্ছে, কি পরিমানের পানি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে এবং কি পরিমান পানি পরিশোধিত হয়ে পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে তার পরিমাপ রাখতে হবে।
১৩.   পানির গুনগত মান ঠিক আছে (DO, PH, Color, etc) কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
১৪.   খাবার পানি এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহারের পানি যেনো আলাধা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১৫.  প্রতি ১০০ জন লোকের জন্যে ১টি করে খাবার পানির পয়েন্ট রাখতে হবে এবং এই পয়েন্ট যেনো টয়লেট থেকে ন্ূন্যতম ২০ফুট দুরে হয় কা নি:শ্চিৎ করতে হবে। 

আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর মধ্যে পানি একটি অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। আমরা এর ব্যবহারে সতর্ক হবো, মিতব্যয়ী হবো, দূষিত কম করবো এবং ব্যবহৃত পানিকে পরিশোধন করার ব্যবস্থা করবো এটাই হোক আমাদের সকলের লক্ষ্য। 






স্থপতি মো: মাহামুদুর রহমান খান (পাপন)

মো: ০১৯১২৪৬৭২৪২

Friday, December 16, 2016

পরিবেশ বান্ধব স্থাপত্য

পরিবেশ বান্ধব স্থাপত্য এমন একটি সৃষ্টি যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক কার্যকলাপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্মীত হয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কম সাধন, পরিবেশ ও প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নক্সা প্রণয়ন, নির্মান, উপকরণ, রক্ষনাবেক্ষণ, সংস্কার ইত্যাদি জড়িত। এটি একটি দীর্ঘ্য প্রক্রিয়া, আমি ছোট করে মূল বিষয়বস্তুগুলো আজকে তুলে ধরবো আপনাদের সামনে।
পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর থেকে বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশ বস্ত্রশিল্পে বহুগুণ এগিয়ে আছে। আর এই শিল্পের মধ্যে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় তা হলো ঝুঁকিমুক্ত শিল্প কারখানা তৈরি। বহু লোকই এখন নতুন করে তাদের শিল্প-কারখানাগুলোকে বানাচ্ছে এবং তা করতে গিয়ে একটি ব্যাপার সবার মধ্যেই দেখা যাচ্ছে যে, তারা সবাই পরিবেশ বান্ধব স্থাপত্য বানাতে খুবই আগ্রহী। এর জন্যে তারা খরচের কথা ভুলে গিয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং বানাচ্ছে এবং দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জায়গা থেকে বিল্ডিং এর সার্টিফিকেট অর্জন করছে ক্রেতাদের পরিপূর্ণ আস্থা অর্জনের জন্য। যদি তারা LEED CERTIFICATE অর্জন করতে চায় USGBC থেকে তবে তাদেরকে পরিবেশ বান্ধব স্থাপত্য বানানো জন্য কি কি প্রক্রিয়া নিতে হবে সেটাই আজকের লিখার মূল বিষয়।
পরিবেশ বান্ধব স্থাপত্যের মুল পলিসি হলো 3R এবং এই পলিসী কে বাস্তবায়ন করার জন্যে কিছু সুসংহত প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই যেতে হবে। সেই প্রক্রিয়াগুলো খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
      প্রথমেই অবস্থান ও পরিবহনের কথা চিন্তা করে একটি সাইট নির্বাচন করতে হবে। অনুপযুক্ত ও ভ্রমণ দূরত্ব আনেক বেশি এমন সাইটে বিল্ডিং করা থেকে বিরত থাকা উচিত। পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল ভুমি না ব্যবহার করা’ই ভালো এবং বিল্ডিং যেন পরিবেশের উপর কোন প্রতিকুল প্রভাব না ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধানী জমি ও বনাঞ্চল রক্ষা করে বিল্ডিং বানাতে হবে এবং আশেপাশের জনবসতির কথাও মাথায় রাখা উচিৎতাদের কোন ক্ষয়-ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের কতটুকু সুযোগ সুবিধা আছে সাইটের আশেপাশে সেটাও বিবেচনায় এনে সাইট নির্বাচন করতে হবে।
     সাইট নির্বাচনের পর যে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো নির্মান প্রকৃয়ার জন্য যেই দূষণগুলো হয়ে থাকে তা কোনভাবেই সাইটকেও নোংরা করা যাবে না। ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের অবশিষ্ট লোহার টুকড়া, টিনের টুকড়া, তারকাঁটা ইত্যাদিকে নির্দিষ্ট স্থানে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বালু ও সুরকিগুলোকে এক স্থানে রেখে চারপাশে ইট দিয়ে ঘের দিয়ে দিতে হবে যেন এদিক সেদিক ছড়িয়ে সাইট নোংরা না করে। সিমেন্টের খালি বস্তাগুলোকে নষ্ট না করে সেগুলোকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রতিটি কাজেরই প্রমাণ স্বরূপ ছবি তুলে নিদৃষ্ট তারিখসহ সংরক্ষণ করতে হবে। বৃষ্টির সময় সাইটের জমে থাকা পানিগুলোকে সেডিমেনটেশন ট্যাংকের মাধ্যমে সাইট থেকে বের করে দিতে হবে যেন পানির সাথে পলি মিশে চলে যেতে না পারেসাইটে ধুলোবালি যেন কম উড়ে সেই ব্যবস্থা করতে হবে এবং বড় একটি খোলা জায়গা যেন থাকে সাইটে BNBC কোড মেনে ডিজাইন করে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
    কনস্ট্রাকশন সাইটে পানির ব্যবহার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পানি ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে। সাইটের ভিতরের ও বাহিরের অতিরিক্ত পানির ব্যবহার কমাতে হবে এবং ব্যবহৃত পানিকে পরিশোধন করে পুনরায় ব্যবহার করতে হবে। পরিশোধন ছাড়া ব্যবহৃত পানি কোনভাবেই প্রকৃতিতে ছাড়া যাবে না। এতে করে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে না। কি পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে তার একটি হিসাব রাখা অবশ্যই প্রয়োজন এবং বৃষ্টির পানি জমিয়ে ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়াতে হবে।
          বিল্ডিং পরিচালনার খরচ কিভাবে কমানো যায়, কিভাবে একটি বিল্ডিং এর কম শক্তি অপচয় করে অধিক কাজ সম্পন্ন করা যায় এবং কিভাবে একটি বিল্ডিং এ বিকল্প শক্তির ব্যবহার করা যায়, সেই দিকে শুরু থেকেই মনোযোগী হতে হবে। প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে ব্যবহারের মাধ্যমে একটি বিল্ডিং পরিচালনার খরচ অনেক কমিয়ে আনা যায়। এই ক্ষেত্রেও কি পরিমাণ শক্তির খরচ হচ্ছে একটি বিল্ডিং পরিচালনা করতে তার হিসাব রাখা প্রয়োজন। তাহলেই আমরা একটি সঠিক তথ্য পেয়ে যাব কি পরিমাণ বিকল্প শক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে এবং আস্তে আস্তে শক্তির ব্যবহার কমছে; নাকি বাড়ছে? সাইটের আভ্যন্তরীন ব্যবহারের জন্য ব্যাটারি চালিত গাড়ি এবং বাই সাইকেল ব্যবহার করে আমরা অনেক যায়গাতেই পরিবহনে খরচ কমাতে পেরেছি বর্তমানে।     
    একটি নতুন বিল্ডিং বানানোর জন্য আমরা যে সমস্ত কাঁচামালের ব্যবহার করে থাকি অবশ্যই সেই কাঁচামালগুলো পুনরায় ব্যবহারযোগ্য (RECYCLE MATERIAL) হওয়া উচিত। যে সকল কোম্পানি এই কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে তাদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে যে তার পন্য পুনরায় ব্যবহার যোগ্য ব্যবহারের আগে এবং পুনরায় ব্যবহারের জন্য একবার ব্যবহারের পর সকল কাঁচামাল একটি নির্দিষ্ট গুদামে সংরক্ষণ করতে হবে এবং কি পরিমাণ কাঁচামাল পুন:ব্যবহৃত হচ্ছে তার ছবিসহ হিসাব রাখতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সাইটে নির্দিষ্ট জায়গায় বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। কাঁচামাল হিসেবে সহজপ্রাপ্য এবং পরিবেশ বান্ধব কাঁচামালের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
    পরিবেশ বান্ধব স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে আমাদেরকে বিল্ডিং এর আভ্যন্তরীন পরিবেশের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক আলো-বাতাস ব্যবহার কতে হবে এবং যেখানে প্রাকৃতিকভাবে মান ঠিক রাখা সম্ভব নয় সেখানে কৃত্রিম উপায়ে হলেও ব্যবহারকারীর জন্যে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও আরামদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি করতে হবে। ধোঁয়া ও গ্যাস বের হবার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং বাতাস যেন একদিক দিয়ে ঢুকে অপর দিক দিয়ে বের হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে ভিতরের বাতাসগুলোকে টেনে বের করে নতুন বাতাস ঢুকাতে হবে। একজন ডিজাইনারকে অবশ্যই ভ্যান্টিলেশন ডিজাইন করার সময় কি পরিমাণ বাতাস রুমের ভিতরে সঞ্চালন করা দরকার তার সঠিক হিসাব-নিকাশ করতে হবে। কত লাক্স লাইট থাকবে কোথায়, বাতাসের চাপ কত, রুমের ভিতরের তাপমাত্রা কত, অক্সিজেন কতটুকু আছে বাতাসে, আদ্রতা কতটুতু আছে ইত্যাদির নির্দিষ্ট হিসাব প্রতিনিয়তই রাখতে হবে।
একটি পরিবেশ বান্ধব স্থাপত্য তৈরির জন্যে যেমন কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তেমনই একটি ঝুঁকিমুক্ত বিল্ডিং বানানোর জন্য আমাদেরকে অবশ্যই বিল্ডিং এর নিয়ম নীতি, আইন-কাণুন ইত্যাদি মেনেই বানাতে হবে। নিজে নিজে বিল্ডিং না বানিয়ে অবশ্যই কোন অনুমোদিত কনসালট্যান্টের মাধ্যমে বিল্ডিং বানানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা সবাই আইন মেনে ঝুঁকিমুক্ত বিল্ডিং বানাবো এবং ভবিষ্যতে সুন্দর, সার্থক ও পূর্ণাঙ্গরূপে একটি বাসযোগ্য সবুজ, প্রাকৃতিক ও মনোরম পরিবেশের মধ্যে বসবাস করবো, এ’ই হোক আমাদের সকলের কাম্য .................... ।


স্থপতি মোঃ মাহামুদুর রহমান খান পাপন

মো: 01912467242.

Saturday, August 29, 2015

মুরাপাড়া জমিদার বাড়ি

মুরাপাড়া জমিদার বাড়ি

স্থপতি মাহমুদুর রহমান খান পাপন 

স্থপতি ফজিলাতুন সোনিও





ছবি: স্থপতি মো: মাহামুদুর রহমান খান পাপন

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার অতি পরিচিত একটি স্থান মুরাপাড়া জমিদার বাড়ি। ইহা ঢাকা থেকে ২৫ কি.মি. দূরে নরসিংদী রোডে অবস্থিত।
জমিদার রামরতন ব্যানার্জী মুরাপাড়া জমিদার বাড়িটি বানিয়েছিলেন। তিনি নাটোর স্টেট এর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন এবং তার সততার কারণে একটি উচ্চ পদে উন্নীত হন। একটি উৎস থেকে আমরা জানতে পেরেছি এ বাড়িটি রামরতন ব্যানার্জী তৈরি করেছিলেন ১৮৮৯ সালে। কিন্তু অন্য একটি উৎস বলেছে, রামরতন ব্যানার্জী শুধু এই বাড়িটির ভিত্তি ও কাঠামো তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার পুত্র প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৮৯ সালেই তার পুরনো বাড়ি ছেড়ে পেছনে আরো একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।
১৯০৯ সালে জগদিশ চন্দ্র ব্যানার্জী এই ভবনটি সম্পন্ন করেন এবং নিজেই একজন জমিদার হয়ে ওঠেন। জগদিশ চন্দ্র ব্যানার্জী একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন, কারণ তিনি দুই বার দিল্লীর কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন। জগদিশ চন্দ্র ব্যানার্জী তার শাসনামলে অনেক কিছু তৈরি করেছিলেন প্রজাদের জন্য। অন্যদিকে তিনি সেই প্রজাদের প্রতি ছিলেন অনেক কঠোর। তিনি একজন শক্তিশালী জমিদার ছিলেন। তার শাসনামলে কোন প্রজা যদি সময়মতো খাজনা না দিতো তাহলে তিনি তাদের মাথার চুল কেটে দিতেন এবং অনেক সময় তাদের ঘরবাড়ি আগুণ দিয়ে জ্বালিয়ে দিতেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির সময় জগদিশ চন্দ্র ব্যানার্জী কলকাতা চলে যান।

স্থাপতিক নিদর্শন :
মুরাপাড়া জমিদার বাড়িটি সত্যিকার অর্থেই রূপসী অঞ্চলের একটি ল্যান্ডমার্ক। জমিদার বাড়ি পৌঁছানোর আগেই একটি মন্দির চোখে পড়ে। একটু এগুনোর পর আরো দুটি মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। মন্দির দুটো পার হয়ে বেশ খানিকটা খোলা যায়গা। আর তারপর একটা পুকুর। পুকুরটির চারদিকে চারটি বাধাই করা ঘাট আর সীমানা দেয়াল। একটি ঘাট ছাড়া বাকি ৩টি ঘাট নতুন করে করা হয়েছে বলে মনে হয়। পুকুরটি পার হয়ে একটা মাঠ। দেখে বোঝা যায় অতীতে মাঠটি আসলে একটি বাগান ছিল। মাঠের পাশেই জমিদার বাড়িটি দাড়িয়ে। জমিদার বাড়িতে ঢুকতে হয় হাতের বা দিকে অবস্থিত একটি বিশাল আমবাগানের ভিতর দিয়ে। ওখানে বড় বড় বেশ কতগুলো পুরনো আমগাছ রয়েছে। আম বাগান পেরুনোর পরই হাতের ডানদিকে একটি বিশাল মাঠ পাওয়া যায়। আর মাঠের পরই জমিদার বাড়ি।
দৃষ্টিনন্দিত দোতলা প্রসাদটি আয়তাকার করে বানানো হয়েছে যা প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ। প্রাসাদটির একটি বড়  পশ্চিমমুখী সম্মূখভাগ আছে। দোতলাবিশিষ্ট বাড়িটির সামনে দিয়ে দুটি লেভেলই ১০ ফুট চওড়া একটি টানা বারান্দা আছেএই বারান্দাটি বাড়ির প্রতিটি কক্ষে ঢোকার ও ভবনের সামনে অবস্থিত মাঠের সমস্ত কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করার জন্যে তৈরি করা হয়েছে। আরো একটি কারণ ছিলো এই বারন্দাটি তৈরি করার, তা হলো পশ্চিম দিকের রোদের থেকে মুল ভবনটিকে রক্ষা করা। এই বারান্দাটিতে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার আর্চ। আর্চের দুই পাশে কোরেনথিয়ান কলাম ব্যবহার করা হয়েছে। আর্চের ভিতরে কাস্ট আয়রনের কারুকার্য করা গ্রীল এবং তার সাথে লাল, নীল ও সবুজ রঙের কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে সূর্যের আলো কাচের ভিতর দিয়ে এসে বারান্দার মেঝেকে রাঙিয়ে তোলে।
বাড়িটির মাঝখানে কোর্ট-ইয়ার্ড আছে। তাকে ঘিরেই বাড়িটির কক্ষ বিভাজন করা হয়েছে। কোর্ট-ইয়ার্ডটিতে ঢুকতে একটি বেশ বড় ভারী কারুকার্যখচিত কাস্ট আয়রনের ফটক পার হতে হয়। এই ফটকটি অন্দর মহলে ঢুকার মুল প্রবেশদ্বার। কোর্ট-ইয়ার্ডে ঢুকতেই হাতের ডান পাশের কক্ষগুলোকে রন্ধনশালা বলে মনে হয়েছে। হাতের বাম দিকের অংশটিতে একটি বেশ বড় ডাবল-হাইটেড কক্ষ। কক্ষটির দুইপাশে দুটো নিশও চোখে পড়লো। আবার ওই কক্ষটি থেকে ভেতরের ৫টি কক্ষে যাওয়া যায়। কক্ষটির সামনে বারান্দা আছে যা নকশা করা কলাম এবং আর্চ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কক্ষগুলোতে বড় বড় ফরাসী জানালা ব্যবহার করা হয়েছে। কক্ষগুলোতে বড় বড় ফরাসী জানালা ব্যবহার করা হয়েছে এবং জানালায় ও দরজায় কাঠের লুভর ব্যবহৃত হয়েছে।
বাড়িটির দুই দিকে ২টি সার্ভিস এন্ট্রি। তবে ডান দিকের সার্ভিস এন্ট্রিটিকে মনে হয় বাড়ির অন্দরমহলের লোকেরা ব্যবহার করতো। ডান দিকের সার্ভিস এন্ট্রিটির সামনে একসময় একটি সুন্দর বাগান ছিল বলেই মনে হয়। বাড়ির বাম অংশে এবং পেছনের দিকে পরিচারক ও পরিচারিকাদের থাকার জায়গা আর একটা ফলের বাগান। বাম পাশের সার্ভিস এন্ট্রি বরাবর পেছনে আরও একটি পুকুর। সম্ভবত গৃহ পরিচারিকাদের দ্বারাই এটা ব্যবহৃত হতো। এই পুকুরটির একটিই বাঁধাই করা ঘাট। পুকুরের চারদিকে হাটার রাস্তা। আর ডান দিকটিতে ফলের বাগান।
বর্তমানে বাড়িটি মুরাপাড়া সরকারী ডিগ্রী কলেজ হিসেবে পরিচিত। 

Sunday, October 27, 2013

গৃহ নির্মানের আদি ও অন্ত ....................(প্রথম পর্ব)

প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষের বেচে থাকার জন্যে একটি আশ্রয়ের প্রয়োজন ছিলো। তখন মানুষ তার আশ্যয় হিসেবে বড় কোন গাছকে বেছে নিতো যেনো ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে গাছে তাদেরকে রক্ষা করে। কিন্তু গাছের পাতা মাথার উপর বৃষ্টির পানি বা রোদের কিরণকে আটকালে কি হবে, মাটিতে বসবাসরত হিঃস্র পশুদের হাত থেকে তাদেরকে কে রক্ষা করবে? তাইতো তারা নিজেদের বাচানোর জন্যে গাছের উপড়ে বসতি নির্মান করলো এবং কিভাবে হিঃস্র পশুদের হার মানিয়ে মাটির উপড় বেছে থাকতে হয় সে কৌশল রপ্ত করলো।
     কিন্তু গাছের উপর বসতিগুলো খুব হালকা ভাবে বানানোর ফলে দেখাযেতো সেই বসতিগুলো একটু ঝড়ো বাতাসেই ভেঙ্গে যেতো। এরপর তারা খুজে পেলো পাহাড়ের গুহা। তারা দেখলো, পাহাড়ের উপরে হিংস্র পশুরা আসে কম এবং বিভিন্ন প্রকৃতিক দুঃর্যোগ যথা, বন্যার পানি, বৃষ্টির পানি পাহাড়ের উপর জ্বমে থাকেনা। ঝর-বৃষ্টির প্রবল আক্রমন ও আটকে দেয় পাথরের দেয়াল। এবং এই ধরনের আশ্রয় অনেক মজবুত। তখন থেকে তারা পথরের গুহাতেই বসবাস করা শুরু করলো
     কিন্তু তারা মূলত তাদের আহাড় যোগাতো শিকার করে। তাই এক আশ্রয়ে থাকলে এক এলাকার সমস্ত শিকার শেষ হয়ে যেতো অল্পদিনেই। এবং পানির খোযে প্রায় প্রতিদিনই তাদেরকে গুহার আশ্রয় ছেড়ে বের হতে হতো। এরপর তারা যখন পানির জন্যে নদীর পাড়ে আসতো এবং আক্রান্ত হতো বণ্যপ্রনীদের দ্বারা তখন প্রাণ বাচাতে তাদেরকে লড়াই করতে হতো। এমন চলতে চলতে তারা দেখলো অনেক পশু পানিকে ভয়পায় এবং পানিতে নেমে গেলে পানি তাদেরকে অনেক পশুর হাত থেকে রক্ষা করে। যকন তাদের লড়াই করার মত সামর্থ থাকতোনা তখন তারা পানির মাঝখানে চলে যেতো। এইভাবেই তারা শিখলো নদীর পানিকে কিভাবে শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তখন তারা পাহাড়ের উচু গুহা ছেড়ে নদীর পাড়ে চলে এলো এবং খাল কেটে তাদের চারপাশে পানির বেশ্টনী তৈরি করলো। এতেকরে বণ্য পশুরা মানুষের কাছাকাছি আসতে পারতোনা। কিন্তু মানুষ চাইলেই তাদের প্রয়োজনীয় জিনিশ খাল পারহয়ে অন্যত্র থেকে নিয়ে আসতে পারতো। এতেকরে মানুষের জীবনধারন আরো সহজ হয়ে এলো ধিরে ধিরে।

চলবে ....................

দরকার পরিবেশবান্ধব পর্যটন

অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা মানুষের চিরন্তন অভ্যাস। তাইতো কৌতূহলী মন নিয়ে মানুষ পাড়ি জমায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে। পেটে যেমন ক্ষুধা আছে; তেমনি আছে মনেরও। কর্মক্লান্ত মন সে ক্ষুধা মেটাতে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে উদগ্রিব হয়ে ওঠে। কখনো নয়নাভিরাম প্রকৃতিকে অক্ষুণ্ন রেখে, কখনো প্রকৃতি আর কৃত্রিমতার ছোঁয়া দিয়ে, আবার কখনো সম্পূর্ণ কৃত্রিমভাবে দেশে দেশে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। এমন অনেক দেশ আছে যার প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে। প্রকৃতির অনন্য লীলাভূমি, অপার সৌন্দর্যের বাংলাও পর্যটন শিল্পের এক সম্ভাবনাময় দেশ। প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক আর ঐতিহ্যেও বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাঙ-এর মতো পর্যটকদের আগমন সেটাই প্রমাণ করে। এদেশে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। আরো রয়েছে সৌন্দর্যের আধার পতেঙ্গা, পারকি, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও কুয়াকাটা। পাহাড় ও দ্বীপের মধ্যে আছে রাঙামাটি, কাপ্তাই, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, মহেশখালি ও সোনাদিয়া। আরও রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এই বনেই বাস করে ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের প্রাণী বেঙল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর, হনুমানসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। রয়েছে ঐতিহাসিক স্থান ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ। মাধবকুণ্ডু, পদ্মা নদী, বাটালী হিল, তামাবিল, হাওরসহ আরও অনেক চোখ জুড়ানো স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের বিমোহিত করে। কিন্তু মানুষের অজ্ঞানতা, হেঁয়ালিপনা, অসচেতনতার কারণে দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে অনেক দর্শনীয় স্থানের পরিবেশ। দর্শনীয় স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পর্যটকের আগমন আনন্দের সংবাদের না হয়ে দুঃসংবাদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেমন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পর্যটক প্রতিদিন জাহাজে করে যাতায়াত করছে। অবাধে গড়ে উঠছে হোটেল-মোটেলসহ দোকান-পাট। সেন্টমার্টিন প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ হওয়ার কারণে ইট-পাথরের বহুতল ভবন নির্মাণ দ্বীপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রবাল তোলা ও বিক্রি নিষেধ থাকলেও অবাধে তা বিক্রি হচ্ছে। মাছ ধরার নৌকার নোঙর প্রবালের ওপরে ফেলায় ভেঙে যাচ্ছে প্রবাল কলোনী ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো পরিবেশ। প্রতি বছর সেন্টমার্টিন থেকে অবৈধভাবে প্রায় ৩০ হাজার প্রবাল তোলা হচ্ছে। ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দ্বীপটির সৌন্দর্য এবং স্বকীয়তা দুটোই ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আবার অচেতন পর্যটকরা চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, কোমলপানীর ক্যান ইত্যাদি যথেচ্ছ ফেলে বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত করছে সৈকত ও সাগরের পানিকে। রাতে উচ্চস্বরে গান-বাজনা আর হৈ-হুল্লোড়ের কারণে ভয়ে অনেক প্রাণী দ্বীপের কাছ ঘেঁষছে না। বিশেষ করে বিশ্বের দুর্লভ প্রজাতির অলিভ রিডলে টার্টল (জলপাই রঙা কাছিম) ভয়ে ডিম না পেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে তাদের বংশ বিস্তার। আবার অসচেতন পর্যটকরা বনের ভেতরে গিয়ে গাছ উপড়ে, পাতা ছিঁড়ে, ফুল তুলে নানাভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। অনেকেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বনে ঘুরতে গিয়ে বন্যপ্রাণী শিকার করছে। বনের ভেতর মাইক বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছে। এতে পশু-পাখির প্রজননে বাধা পাওয়াসহ ভয় পেয়ে তারা সে স্থান ত্যাগ করছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পানি ও পরিবেশ বর্তমানে বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দেশের অন্যান্য সৈকতেরও একই অবস্থা। সুন্দরবনও রক্ষা পায়নি অবিবেচক পর্যটকদের অত্যাচার থেকে। সমুদ্রের পানিতে খাবারের বোতল, প্যাকেট ভাসাসহ কটকা সৈকতের বর্তমান বেহাল দশা দেখলে বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। 


দেশের পরিচিতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনে পর্যটন শিল্প। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী রেসপন্সিবল ট্যুরিজম বা দায়িত্বশীল ভ্রমণ এবং ইকোট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। উন্নত বিশ্বে যে কোনো পর্যটকদের নির্ধারিত নিয়ম-নীতি বা বিধিমালার ভেতরেই ভ্রমণ সম্পন্ন করতে হয়। আমাদের দেশে সেসব নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে সবার সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকাসহ দর্শনীয় স্থানগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই পারে পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প গড়তে।

Friday, October 25, 2013

সমস্যা সমাধানেই সফলতা

পৃথিবীর সকল সমস্যারই এক বা একাধিক সমাধান আছে। কিন্তু একটি সমস্যার সমাধান করতে হলে নিজেকে জানতে হবে এবং খুজে বের করতে হবে প্রকৃত সমস্যা কি এবং সমস্যা কাকে বলে।
সমস্যার কারণ, লক্ষন ও প্রতিকার নিয়ে যারা চিন্তা করেন মূলত তারাই সত্যিকারের সমস্যার কাছাকাছি পৌছে তার সমাধান বের করতে পারেন। আর যারা সমস্যাকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থহন তারা বার বার সমস্যা সমাধানের জন্যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই এই কাজটি করেন। যারা সমস্যাকে বুঝতে পারেননা, তারাহুরো করে সমাধানে পৌছে যেতে চান, তারাই জীবনে ভুল করেন। যার মাশুল হয়তো তাকে সারা জীবন ধরে দিতে হয়।
মানুষের জীবনের সমস্ত কাজই ভেবেচিন্তে করতে হয়। কোন কাজ করলে কি হবে, না করলে কি হতো, কিভাবে করলে বেশি ভালো হয়, কাজটি করতে গিয়ে কি কি করতে হবে, কি কি থেকে বিরত থাকতে হবে ইত্যাদি কাজ করার আগেই চিন্তা করতে হয়।
আর যারা এক সকল চিন্তাভাবনা করে কাজ করেন, তাদের জীবনের বেশির ভাগ কাজই সফল হয়। 

Monday, October 21, 2013

রান্নাঘর (Heart of a Resident)

মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে খাদ্য। আর মানুষের এই খাদ্য তৈরীর জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন। রান্নাঘর হচ্ছে সেই ঘর বা ঘরের অংশ যেখানে রান্না করা এবং তৈরী করা খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্য তৈরীর উপকরণসমূহ জমা করে রাখা হয়।
রান্নাঘর অনেক ধরণের হতে পারে। আমি আজকে মূলত আবাসিক রান্নাঘর নিয়ে আলোচনা করব।
রান্নাঘরকে একটি বাড়ির হৃদপিন্ড বলা হয়। এই রান্নাঘর ডিজাইন করতে যে সমস্ত আনুষাঙ্গিক উপাদানগুলো প্রয়োজন তা হচ্ছে:
(1) Range / Stove (2) Sink (3) Refrigerator (4) Kitchen Cabinet (5) Microwave (6) Dishwasher, etc.
আমরা সাধারণত রান্নাঘরে সবচেয়ে বেশি যে সমস্ত উপকরণগুলো ব্যবহার করি তার উপর ভিত্তি করে রান্নাঘর ব্যবহারের work triangle তৈরি করা হয়েছে। আর এই জন্যে দরকার-
1. Range
2. Sink
3. Refrigerator / store.
একজন মানুষ যখন রান্নাঘরে রান্না করতে যান, তার একটি খোলা জায়গা রান্নাঘরে থাকা অবশ্যই বাঞ্চনীয়। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, যে সমস্ত খাবার কেটে খেতে হয় বা রান্না করতে হয়, সেই খাবারগুলোকে কাটার আগেই ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। কেটে পড়ে ধুলে খাবারের গুণাগুণ অনেকটাই চলে যায় ধোয়ার সাথে। তাই একজন স্থপতি বা ডিজাইনারকে work triangle মাথায় রেখে এবং স্বাস্থ্যসম্যত খাবার বানানোর সুবিধার্থে ডিজাইনও সেইভাবে করা উচিত।
কিভাবে রান্নাঘর ডিজাইন করলে ব্যবহার করে মানুষ অনেক বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করবে তা নিম্নে দেয়া হলো:
  • ·         ডিজাইনারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, work triangle এর মধ্যে যেন কোন সার্কুলেশন না পড়ে।
  • ·         যখন রান্নাঘর কেবিনেট ডিজাইন করবেন তখন অবশ্যই সম্মুখভাব নিয়ে চিন্তা কবেন। প্রস্থ্য যেন পরিমাণমত থাকে এবং কেবিনেট এর দরজাগুলো যেন সহজে খোলা যায়।
  • ·         সমস্ত দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা যেন code অনুসারে বানানো হয় সেইদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • ·         Kitchen hood যেন ঠিকমত বসানো হয়।
  • ·         পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে।
  • ·         Plumbing line গুলোকেও ডিজাইন করে দিতে হবে।


আমাদের দেশে রান্নাঘর বানানোর কিছু আইন আছে যা একজন ডিজাইনারকে অবশ্যই মানতে হবে। নিম্নে সেই আইনগুলো দেয়া হলো:
1.       রান্নাঘরের ন্যূনতম ক্ষেত্রফল ৪ বর্গমিটার এবং প্রস্থ ১.৫ মিটার হইবে, তবে এই এলাকা দেওয়াল দ্বারা আবদ্ধ হওয়ার বাধ্যবাধকতা নাই; এবং
2.       রান্নাঘরের ন্যূনতম উচ্চতা ২.৭৫ মিটার হইবে; এবং
3.       বাসগৃহের রান্নাঘরের জানালা ন্যূনতম ১ (এক) বর্গমিটার ক্ষেত্রফল ব্যাপিয়া সরাসরি অথবা সর্বোচ্চ ২.০ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট বারান্দার মাধ্যমে বহি:পরিসর অথবা আভ্যন্তরীণ অঙ্গণ বা আঙ্গিনা বা উঠান এর সাথে খোলা থাকিতে পারিবে। যথাযথভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও যান্ত্রিক উপায়ে বায়ুপ্রবাহের ব্যবস্থা থাকিলে বাসগৃহ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে বহির্দেয়ালে জানালা না থাকিলেও চলিবে।

ডিজাইনারদের সুবিধার্থে কিছু চিত্রের মাধ্যমে রান্নাঘরের বিভিন্ন স্থানের পরিমাণগুলো দেখানো হলো:

পরিশেষ: একটি রান্নাঘর নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়। যেহেতু মানুষের চিন্তাশক্তির সীমাবদ্ধতা পরিমাপ করা খুব কঠিন, সেহেতু ডিজাইন ও অনেক ভাবে আসতে পারে রান্নাঘরের। এটি মূলত চর্চার ব্যাপার। আমি আমার মতো করে খুবই অল্প কথায় কিছুটা তুলে ধরলাম। যদি এতে করে কোন মানুষের অল্প হলেও উপকার সাধিত হয়, তবেই আমার লেখা সার্থক।
















প্রাকৃতিক পরিবেশের শৈল্পীক ভাবনা

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশগত সমস্যা একটি মারাত্মক সমস্যা। একটু লক্ষ্য করলেই আমরা দেখতে পাই, নিজেদের অবহেলার কারনেই প্রতিদিন আমরা চারপাশে তৈরি করছি বিষাক্ত পরিমন্ডল এবং নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছি এক নি:শব্দ বিষক্রিয়ার মধ্যে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক অবনতি ঘটছে, যা আমাদের জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ।
পরিবেশ দূষণের এই মরণ ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বৃক্ষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। মানব সভ্যতার ধারাবাহিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নিবিড় বৃক্ষ শোভিত অরণ্যের শ্যাম-স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের পটভূমিতেই উন্মেষ ঘটেছিল মানুষের আদিম সভ্যতারআদিম যুগে মানুষ ছিল সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতি নির্ভর। মানুষের সার্বিক চাহিদা পূরণের একমাত্র উৎস ছিল প্রকৃতির সুপরিসর অঙ্গণ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ রক্ষায়ও বৃক্ষের অবদান অনেক বেশি। আমাদের দেশে উপকূলীয় দূর্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীহীনতার কারণে। বাংলাদেশের সুন্দরবন ও বান্দরবান দুর্যোগের বিরুদ্ধে অতন্ত্র প্রহরী হয়ে দাড়িয়ে আছে। সামুদ্রিক জলোচ্ছাস, ভূমিক্ষয় রোধ করার জন্য উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।
আমাদের দেশের অনেক মানুষেরই জমি-জমা, ঘরবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীগুলোর চারপাশে যদি সবুজ বেষ্টনী দ্বারা ঘিরে রাখা যায় সেই ক্ষেত্রে যেমন ভূমিক্ষয় রোধ করা যাবে, তেমনই নদ-নদীর পাড়গুলোও মানুষের ব্যবহার উপযোগী হবে, অনেক নান্দনিক হবে। আর সেই সমস্ত জায়গায় মানুষ প্রাকৃতিক শোভাকে আরো ভালভাবে উপভোগ করতে পারবে। এই বৃক্ষরোপণ শুধু নান্দনীক অর্থেই নয়, ঘূর্ণীঝড়, জলোচ্ছাস, হ্যারিকেনসহ অনেক প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিষাক্ত মরণ ছোবলের বিরুদ্ধেও দাড়াবে মানুষের আশ্রয়কে আরও নিরাপদ করবে।
বৃক্ষের গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। আমি শুধু আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিলের পাশে বৃক্ষ রোপণের সুবিধা বোঝার জন্যে ছোট্ট একটি চিত্র আপনাদের মাঝে তুলে ধরছি। আমাদের দেশের সরকার ও জনগণের একটু সদিচ্ছাই যথেষ্ট এই সমস্ত কাজ করার জন্যে। বর্তমান সরকার পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ইহা আমাদের দেশের জন্যে অনেক বড় একটা পাওয়া। সুস্থ একটি পরিবেশতো আমরা পেয়েছিই, সেই সাথে ঢাকা শহরের চেহারাই পাল্টে দিয়েছে হাতিরঝিল।
সারা বাংলাদেশের সমস্ত নদ-নদীগুলোকে যদি শুধুমাত্র বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমেও উন্নতি সাধন করা যায়, তাহলেও আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকেও আমাদের দেশ অনেকাংশে রক্ষা পাবে। কেননা, একটি দেশে শতকরা ২৫% বণায়ন থাকা বাঞ্চনীয়, যেখানে আমাদের দেশে মাত্র ১৬% বর্তমান।

বেশি বেশি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দেশের বণায়নের ঘাটতি পূরণ করা আপনার আমার সকলেরই কর্তব্য। আসুন আমরা শুধুমাত্র দেশের সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজ উদ্যোগে প্রতিটি বাড়িতে ণূন্যতম দু'টি করে গাছ লাগাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সবুজ ও সুন্দর একটি পৃথিবী দিয়ে যাওয়ার জন্যে।