Sunday, October 27, 2013

গৃহ নির্মানের আদি ও অন্ত ....................(প্রথম পর্ব)

প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষের বেচে থাকার জন্যে একটি আশ্রয়ের প্রয়োজন ছিলো। তখন মানুষ তার আশ্যয় হিসেবে বড় কোন গাছকে বেছে নিতো যেনো ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে গাছে তাদেরকে রক্ষা করে। কিন্তু গাছের পাতা মাথার উপর বৃষ্টির পানি বা রোদের কিরণকে আটকালে কি হবে, মাটিতে বসবাসরত হিঃস্র পশুদের হাত থেকে তাদেরকে কে রক্ষা করবে? তাইতো তারা নিজেদের বাচানোর জন্যে গাছের উপড়ে বসতি নির্মান করলো এবং কিভাবে হিঃস্র পশুদের হার মানিয়ে মাটির উপড় বেছে থাকতে হয় সে কৌশল রপ্ত করলো।
     কিন্তু গাছের উপর বসতিগুলো খুব হালকা ভাবে বানানোর ফলে দেখাযেতো সেই বসতিগুলো একটু ঝড়ো বাতাসেই ভেঙ্গে যেতো। এরপর তারা খুজে পেলো পাহাড়ের গুহা। তারা দেখলো, পাহাড়ের উপরে হিংস্র পশুরা আসে কম এবং বিভিন্ন প্রকৃতিক দুঃর্যোগ যথা, বন্যার পানি, বৃষ্টির পানি পাহাড়ের উপর জ্বমে থাকেনা। ঝর-বৃষ্টির প্রবল আক্রমন ও আটকে দেয় পাথরের দেয়াল। এবং এই ধরনের আশ্রয় অনেক মজবুত। তখন থেকে তারা পথরের গুহাতেই বসবাস করা শুরু করলো
     কিন্তু তারা মূলত তাদের আহাড় যোগাতো শিকার করে। তাই এক আশ্রয়ে থাকলে এক এলাকার সমস্ত শিকার শেষ হয়ে যেতো অল্পদিনেই। এবং পানির খোযে প্রায় প্রতিদিনই তাদেরকে গুহার আশ্রয় ছেড়ে বের হতে হতো। এরপর তারা যখন পানির জন্যে নদীর পাড়ে আসতো এবং আক্রান্ত হতো বণ্যপ্রনীদের দ্বারা তখন প্রাণ বাচাতে তাদেরকে লড়াই করতে হতো। এমন চলতে চলতে তারা দেখলো অনেক পশু পানিকে ভয়পায় এবং পানিতে নেমে গেলে পানি তাদেরকে অনেক পশুর হাত থেকে রক্ষা করে। যকন তাদের লড়াই করার মত সামর্থ থাকতোনা তখন তারা পানির মাঝখানে চলে যেতো। এইভাবেই তারা শিখলো নদীর পানিকে কিভাবে শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তখন তারা পাহাড়ের উচু গুহা ছেড়ে নদীর পাড়ে চলে এলো এবং খাল কেটে তাদের চারপাশে পানির বেশ্টনী তৈরি করলো। এতেকরে বণ্য পশুরা মানুষের কাছাকাছি আসতে পারতোনা। কিন্তু মানুষ চাইলেই তাদের প্রয়োজনীয় জিনিশ খাল পারহয়ে অন্যত্র থেকে নিয়ে আসতে পারতো। এতেকরে মানুষের জীবনধারন আরো সহজ হয়ে এলো ধিরে ধিরে।

চলবে ....................

দরকার পরিবেশবান্ধব পর্যটন

অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা মানুষের চিরন্তন অভ্যাস। তাইতো কৌতূহলী মন নিয়ে মানুষ পাড়ি জমায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে। পেটে যেমন ক্ষুধা আছে; তেমনি আছে মনেরও। কর্মক্লান্ত মন সে ক্ষুধা মেটাতে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে উদগ্রিব হয়ে ওঠে। কখনো নয়নাভিরাম প্রকৃতিকে অক্ষুণ্ন রেখে, কখনো প্রকৃতি আর কৃত্রিমতার ছোঁয়া দিয়ে, আবার কখনো সম্পূর্ণ কৃত্রিমভাবে দেশে দেশে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। এমন অনেক দেশ আছে যার প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে। প্রকৃতির অনন্য লীলাভূমি, অপার সৌন্দর্যের বাংলাও পর্যটন শিল্পের এক সম্ভাবনাময় দেশ। প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক আর ঐতিহ্যেও বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাঙ-এর মতো পর্যটকদের আগমন সেটাই প্রমাণ করে। এদেশে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। আরো রয়েছে সৌন্দর্যের আধার পতেঙ্গা, পারকি, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও কুয়াকাটা। পাহাড় ও দ্বীপের মধ্যে আছে রাঙামাটি, কাপ্তাই, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, মহেশখালি ও সোনাদিয়া। আরও রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এই বনেই বাস করে ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের প্রাণী বেঙল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর, হনুমানসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। রয়েছে ঐতিহাসিক স্থান ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ। মাধবকুণ্ডু, পদ্মা নদী, বাটালী হিল, তামাবিল, হাওরসহ আরও অনেক চোখ জুড়ানো স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের বিমোহিত করে। কিন্তু মানুষের অজ্ঞানতা, হেঁয়ালিপনা, অসচেতনতার কারণে দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে অনেক দর্শনীয় স্থানের পরিবেশ। দর্শনীয় স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পর্যটকের আগমন আনন্দের সংবাদের না হয়ে দুঃসংবাদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেমন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পর্যটক প্রতিদিন জাহাজে করে যাতায়াত করছে। অবাধে গড়ে উঠছে হোটেল-মোটেলসহ দোকান-পাট। সেন্টমার্টিন প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ হওয়ার কারণে ইট-পাথরের বহুতল ভবন নির্মাণ দ্বীপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রবাল তোলা ও বিক্রি নিষেধ থাকলেও অবাধে তা বিক্রি হচ্ছে। মাছ ধরার নৌকার নোঙর প্রবালের ওপরে ফেলায় ভেঙে যাচ্ছে প্রবাল কলোনী ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো পরিবেশ। প্রতি বছর সেন্টমার্টিন থেকে অবৈধভাবে প্রায় ৩০ হাজার প্রবাল তোলা হচ্ছে। ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দ্বীপটির সৌন্দর্য এবং স্বকীয়তা দুটোই ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আবার অচেতন পর্যটকরা চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, কোমলপানীর ক্যান ইত্যাদি যথেচ্ছ ফেলে বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত করছে সৈকত ও সাগরের পানিকে। রাতে উচ্চস্বরে গান-বাজনা আর হৈ-হুল্লোড়ের কারণে ভয়ে অনেক প্রাণী দ্বীপের কাছ ঘেঁষছে না। বিশেষ করে বিশ্বের দুর্লভ প্রজাতির অলিভ রিডলে টার্টল (জলপাই রঙা কাছিম) ভয়ে ডিম না পেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে তাদের বংশ বিস্তার। আবার অসচেতন পর্যটকরা বনের ভেতরে গিয়ে গাছ উপড়ে, পাতা ছিঁড়ে, ফুল তুলে নানাভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। অনেকেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বনে ঘুরতে গিয়ে বন্যপ্রাণী শিকার করছে। বনের ভেতর মাইক বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছে। এতে পশু-পাখির প্রজননে বাধা পাওয়াসহ ভয় পেয়ে তারা সে স্থান ত্যাগ করছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পানি ও পরিবেশ বর্তমানে বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দেশের অন্যান্য সৈকতেরও একই অবস্থা। সুন্দরবনও রক্ষা পায়নি অবিবেচক পর্যটকদের অত্যাচার থেকে। সমুদ্রের পানিতে খাবারের বোতল, প্যাকেট ভাসাসহ কটকা সৈকতের বর্তমান বেহাল দশা দেখলে বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। 


দেশের পরিচিতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনে পর্যটন শিল্প। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী রেসপন্সিবল ট্যুরিজম বা দায়িত্বশীল ভ্রমণ এবং ইকোট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। উন্নত বিশ্বে যে কোনো পর্যটকদের নির্ধারিত নিয়ম-নীতি বা বিধিমালার ভেতরেই ভ্রমণ সম্পন্ন করতে হয়। আমাদের দেশে সেসব নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে সবার সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকাসহ দর্শনীয় স্থানগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই পারে পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প গড়তে।

Friday, October 25, 2013

সমস্যা সমাধানেই সফলতা

পৃথিবীর সকল সমস্যারই এক বা একাধিক সমাধান আছে। কিন্তু একটি সমস্যার সমাধান করতে হলে নিজেকে জানতে হবে এবং খুজে বের করতে হবে প্রকৃত সমস্যা কি এবং সমস্যা কাকে বলে।
সমস্যার কারণ, লক্ষন ও প্রতিকার নিয়ে যারা চিন্তা করেন মূলত তারাই সত্যিকারের সমস্যার কাছাকাছি পৌছে তার সমাধান বের করতে পারেন। আর যারা সমস্যাকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থহন তারা বার বার সমস্যা সমাধানের জন্যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই এই কাজটি করেন। যারা সমস্যাকে বুঝতে পারেননা, তারাহুরো করে সমাধানে পৌছে যেতে চান, তারাই জীবনে ভুল করেন। যার মাশুল হয়তো তাকে সারা জীবন ধরে দিতে হয়।
মানুষের জীবনের সমস্ত কাজই ভেবেচিন্তে করতে হয়। কোন কাজ করলে কি হবে, না করলে কি হতো, কিভাবে করলে বেশি ভালো হয়, কাজটি করতে গিয়ে কি কি করতে হবে, কি কি থেকে বিরত থাকতে হবে ইত্যাদি কাজ করার আগেই চিন্তা করতে হয়।
আর যারা এক সকল চিন্তাভাবনা করে কাজ করেন, তাদের জীবনের বেশির ভাগ কাজই সফল হয়। 

Monday, October 21, 2013

রান্নাঘর (Heart of a Resident)

মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে খাদ্য। আর মানুষের এই খাদ্য তৈরীর জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন। রান্নাঘর হচ্ছে সেই ঘর বা ঘরের অংশ যেখানে রান্না করা এবং তৈরী করা খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্য তৈরীর উপকরণসমূহ জমা করে রাখা হয়।
রান্নাঘর অনেক ধরণের হতে পারে। আমি আজকে মূলত আবাসিক রান্নাঘর নিয়ে আলোচনা করব।
রান্নাঘরকে একটি বাড়ির হৃদপিন্ড বলা হয়। এই রান্নাঘর ডিজাইন করতে যে সমস্ত আনুষাঙ্গিক উপাদানগুলো প্রয়োজন তা হচ্ছে:
(1) Range / Stove (2) Sink (3) Refrigerator (4) Kitchen Cabinet (5) Microwave (6) Dishwasher, etc.
আমরা সাধারণত রান্নাঘরে সবচেয়ে বেশি যে সমস্ত উপকরণগুলো ব্যবহার করি তার উপর ভিত্তি করে রান্নাঘর ব্যবহারের work triangle তৈরি করা হয়েছে। আর এই জন্যে দরকার-
1. Range
2. Sink
3. Refrigerator / store.
একজন মানুষ যখন রান্নাঘরে রান্না করতে যান, তার একটি খোলা জায়গা রান্নাঘরে থাকা অবশ্যই বাঞ্চনীয়। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, যে সমস্ত খাবার কেটে খেতে হয় বা রান্না করতে হয়, সেই খাবারগুলোকে কাটার আগেই ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। কেটে পড়ে ধুলে খাবারের গুণাগুণ অনেকটাই চলে যায় ধোয়ার সাথে। তাই একজন স্থপতি বা ডিজাইনারকে work triangle মাথায় রেখে এবং স্বাস্থ্যসম্যত খাবার বানানোর সুবিধার্থে ডিজাইনও সেইভাবে করা উচিত।
কিভাবে রান্নাঘর ডিজাইন করলে ব্যবহার করে মানুষ অনেক বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করবে তা নিম্নে দেয়া হলো:
  • ·         ডিজাইনারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, work triangle এর মধ্যে যেন কোন সার্কুলেশন না পড়ে।
  • ·         যখন রান্নাঘর কেবিনেট ডিজাইন করবেন তখন অবশ্যই সম্মুখভাব নিয়ে চিন্তা কবেন। প্রস্থ্য যেন পরিমাণমত থাকে এবং কেবিনেট এর দরজাগুলো যেন সহজে খোলা যায়।
  • ·         সমস্ত দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা যেন code অনুসারে বানানো হয় সেইদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • ·         Kitchen hood যেন ঠিকমত বসানো হয়।
  • ·         পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে।
  • ·         Plumbing line গুলোকেও ডিজাইন করে দিতে হবে।


আমাদের দেশে রান্নাঘর বানানোর কিছু আইন আছে যা একজন ডিজাইনারকে অবশ্যই মানতে হবে। নিম্নে সেই আইনগুলো দেয়া হলো:
1.       রান্নাঘরের ন্যূনতম ক্ষেত্রফল ৪ বর্গমিটার এবং প্রস্থ ১.৫ মিটার হইবে, তবে এই এলাকা দেওয়াল দ্বারা আবদ্ধ হওয়ার বাধ্যবাধকতা নাই; এবং
2.       রান্নাঘরের ন্যূনতম উচ্চতা ২.৭৫ মিটার হইবে; এবং
3.       বাসগৃহের রান্নাঘরের জানালা ন্যূনতম ১ (এক) বর্গমিটার ক্ষেত্রফল ব্যাপিয়া সরাসরি অথবা সর্বোচ্চ ২.০ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট বারান্দার মাধ্যমে বহি:পরিসর অথবা আভ্যন্তরীণ অঙ্গণ বা আঙ্গিনা বা উঠান এর সাথে খোলা থাকিতে পারিবে। যথাযথভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও যান্ত্রিক উপায়ে বায়ুপ্রবাহের ব্যবস্থা থাকিলে বাসগৃহ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে বহির্দেয়ালে জানালা না থাকিলেও চলিবে।

ডিজাইনারদের সুবিধার্থে কিছু চিত্রের মাধ্যমে রান্নাঘরের বিভিন্ন স্থানের পরিমাণগুলো দেখানো হলো:

পরিশেষ: একটি রান্নাঘর নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়। যেহেতু মানুষের চিন্তাশক্তির সীমাবদ্ধতা পরিমাপ করা খুব কঠিন, সেহেতু ডিজাইন ও অনেক ভাবে আসতে পারে রান্নাঘরের। এটি মূলত চর্চার ব্যাপার। আমি আমার মতো করে খুবই অল্প কথায় কিছুটা তুলে ধরলাম। যদি এতে করে কোন মানুষের অল্প হলেও উপকার সাধিত হয়, তবেই আমার লেখা সার্থক।
















প্রাকৃতিক পরিবেশের শৈল্পীক ভাবনা

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশগত সমস্যা একটি মারাত্মক সমস্যা। একটু লক্ষ্য করলেই আমরা দেখতে পাই, নিজেদের অবহেলার কারনেই প্রতিদিন আমরা চারপাশে তৈরি করছি বিষাক্ত পরিমন্ডল এবং নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছি এক নি:শব্দ বিষক্রিয়ার মধ্যে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক অবনতি ঘটছে, যা আমাদের জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ।
পরিবেশ দূষণের এই মরণ ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বৃক্ষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। মানব সভ্যতার ধারাবাহিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নিবিড় বৃক্ষ শোভিত অরণ্যের শ্যাম-স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের পটভূমিতেই উন্মেষ ঘটেছিল মানুষের আদিম সভ্যতারআদিম যুগে মানুষ ছিল সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতি নির্ভর। মানুষের সার্বিক চাহিদা পূরণের একমাত্র উৎস ছিল প্রকৃতির সুপরিসর অঙ্গণ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ রক্ষায়ও বৃক্ষের অবদান অনেক বেশি। আমাদের দেশে উপকূলীয় দূর্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীহীনতার কারণে। বাংলাদেশের সুন্দরবন ও বান্দরবান দুর্যোগের বিরুদ্ধে অতন্ত্র প্রহরী হয়ে দাড়িয়ে আছে। সামুদ্রিক জলোচ্ছাস, ভূমিক্ষয় রোধ করার জন্য উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।
আমাদের দেশের অনেক মানুষেরই জমি-জমা, ঘরবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীগুলোর চারপাশে যদি সবুজ বেষ্টনী দ্বারা ঘিরে রাখা যায় সেই ক্ষেত্রে যেমন ভূমিক্ষয় রোধ করা যাবে, তেমনই নদ-নদীর পাড়গুলোও মানুষের ব্যবহার উপযোগী হবে, অনেক নান্দনিক হবে। আর সেই সমস্ত জায়গায় মানুষ প্রাকৃতিক শোভাকে আরো ভালভাবে উপভোগ করতে পারবে। এই বৃক্ষরোপণ শুধু নান্দনীক অর্থেই নয়, ঘূর্ণীঝড়, জলোচ্ছাস, হ্যারিকেনসহ অনেক প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিষাক্ত মরণ ছোবলের বিরুদ্ধেও দাড়াবে মানুষের আশ্রয়কে আরও নিরাপদ করবে।
বৃক্ষের গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। আমি শুধু আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিলের পাশে বৃক্ষ রোপণের সুবিধা বোঝার জন্যে ছোট্ট একটি চিত্র আপনাদের মাঝে তুলে ধরছি। আমাদের দেশের সরকার ও জনগণের একটু সদিচ্ছাই যথেষ্ট এই সমস্ত কাজ করার জন্যে। বর্তমান সরকার পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ইহা আমাদের দেশের জন্যে অনেক বড় একটা পাওয়া। সুস্থ একটি পরিবেশতো আমরা পেয়েছিই, সেই সাথে ঢাকা শহরের চেহারাই পাল্টে দিয়েছে হাতিরঝিল।
সারা বাংলাদেশের সমস্ত নদ-নদীগুলোকে যদি শুধুমাত্র বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমেও উন্নতি সাধন করা যায়, তাহলেও আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকেও আমাদের দেশ অনেকাংশে রক্ষা পাবে। কেননা, একটি দেশে শতকরা ২৫% বণায়ন থাকা বাঞ্চনীয়, যেখানে আমাদের দেশে মাত্র ১৬% বর্তমান।

বেশি বেশি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দেশের বণায়নের ঘাটতি পূরণ করা আপনার আমার সকলেরই কর্তব্য। আসুন আমরা শুধুমাত্র দেশের সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজ উদ্যোগে প্রতিটি বাড়িতে ণূন্যতম দু'টি করে গাছ লাগাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সবুজ ও সুন্দর একটি পৃথিবী দিয়ে যাওয়ার জন্যে।